কে এই বৈভব সূর্যবংশী; যিনি গুগল-এর সিইও থেকে শুরু করে পুরো আইপিএলের নজর নিজের দিকে আকর্ষণ করেছেন।
বিহারের সমস্তিপুর গ্রামে বেড়ে ওঠা একটি ছেলে, যে আজ ১৪ বছর বয়সে আইপিএলে নেমে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
বৈভব সূর্যবংশীর আইপিএলে অভিষেক :
বৈভব সূর্যবংশী, যে ১৯শে এপ্রিল সাওয়াই মানসিংহ স্টেডিয়ামে রাজস্থান রয়্যালসের (আরআর) হয়ে আইপিএলে অভিষেক করেছে। সেদিন সঞ্জু স্যামসন অনুপস্থিত থাকায় তার জায়গায় তাকে নামানো হয়েছিল এবং তার সঙ্গী ছিল যশস্বী জয়সওয়াল। বৈভব মাঠে প্রবেশ করার সাথে সাথেই পুরো স্টেডিয়ামের দর্শক উল্লাসে ফেটে পড়ে, কারণ অনেকেই তাকে দেখার জন্য অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করছিল। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল তার বয়স মাত্র ১৪ বছর এবং এত কম বয়সে এত তারকা খেলোয়াড়ের সাথে খেলা এবং সুযোগ পাওয়া অনেক বড় ব্যাপার। বিশেষ করে যখন সে নামার সাথে সাথেই অভিজ্ঞ বোলার শার্দুল ঠাকুরের প্রথম বলেই ছক্কা মারে, তখন সকলের নজর তার দিকে ঘুরে যায়। বৈভব ২০ বলে ৩৪ রান করে, যা খারাপ ছিল না, তবে এই কিশোরের অভিষেক ম্যাচে আরও বেশি রানের প্রত্যাশা ছিল। খেলার সময় তার চোখে সামান্যতম উদ্বেগ বা ভয় ছিল না, সে বল মারার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে এইডেন মার্করামের হাতে উইকেট হারায়। জয়সওয়ালের সাথে মিলে সে ৮৫ রান করে এবং তাদের লক্ষ্য ছিল ১৮১। আরআর হারলেও সকলের নজর তাদের হারের চেয়ে বৈভব সূর্যবংশীর উপরই বেশি ছিল।
যখন সে আউট হয়, তার চোখে জল দেখা যায়। অন্য কোনও ব্যাটার হলে হয়তো এত প্রভাবিত হত না, কিন্তু এটি একটি কিশোরের অভিষেক এবং সেটি আইপিএলের মতো এত বড় লিগে, তাই খারাপ লাগা স্বাভাবিক। এত কম বয়সে এত বড় মাঠে খেলা, যেখানে তার বয়সী সবাই হয়তো তাদের হোমওয়ার্ক বা গেম খেলতে ব্যস্ত, সেখানে এই ছেলেটি জাতীয় স্তরে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ইতিহাস রচনা করতে যাচ্ছিল, এটি কোনও ছোট কথা নয়।
যারা প্রশংসা করেছেন:
বৈভব অনেকের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছে, যেমন জিও সিনেমাতে ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় প্রাক্তন ক্রিকেটার সঞ্জয় মাঞ্জরেকরও বলেছিলেন যে ছেলের আইপিএল অভিষেক দেখে তার বাবা-মা নিশ্চয়ই খুব গর্বিত হবেন এবং তিনি অনেক প্রশংসাও করেছিলেন। এমনকি গুগল-এর সিইও সুন্দর পিচাইও টুইটার এ তার অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন, “আইপিএলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রের খেলা দেখার জন্য ঘুম থেকে উঠুন, কী দারুণ অভিষেক!” সুন্দর পিচাই অনেক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে তিনি বাড়িতে অবসর সময়ে ক্রিকেট দেখেন। এবারও তিনি নিশ্চিত করেছেন যে যখন তিনি লাইভ স্ট্রিমিং খোলেন, তখন বৈভবের ব্যাটিং চলছিল এবং তিনি যখন দেখেন তার বয়স ১৪ বছর, তখন তিনিও অনেক প্রশংসা করেন এবং এই পোস্ট দেখে এই কিশোরের দিকে আরও বেশি মনোযোগ আকৃষ্ট হয়।
কে এই বৈভব:-
বৈভব বিহারের সমস্তিপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং সেখান থেকেই তার যাত্রা শুরু হয়েছিল, তবে সে তার প্যাশন নিয়ে খুব উচ্চাভিলাষী ছিল এবং তার সেই জেদ দেখে তার বাবা সঞ্জীব রঘুবংশী তার নিজের জমি বিক্রি করে তার ছেলের স্বপ্ন পূরণের জন্য ৮ বছর বয়সে পাটনার স্বনামধন্য ক্রিকেট কোচ মণীশ ওঝার কাছে নিয়ে যান। সেখানে একটানা পরিশ্রমের পর যখন তার বয়স ১০ বছর হয়, মণীশ ওঝা তার সেই আবেগ এবং প্রতিভা ভালোভাবে চিনতে পারেন এবং তাকে বলেছিলেন বড় চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত থাকতে যখন সুযোগ দরজায় কড়া নাড়বে। এরপর বিহার ক্রিকেট বোর্ড তাকে সমর্থন করে এবং রঞ্জি ট্রফিতে প্রবেশ করে এই ১৪ বছর বয়সী কিশোর। এরপর অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় নির্বাচক তিলক নাইডু তাকে কল্ট টেস্ট ক্রিকেটের জন্য উৎসাহিত করেন। তারপর আসে আইপিএল নিলামের পালা, যেখানে বৈভব সূর্যবংশীর নাম দেখা যায় এবং সেই সময় তার বয়স ছিল ১৩ বছর, এবং বেস প্রাইস ছিল ৩০ লক্ষ টাকা, কিন্তু আরআর-এর কোচ রাহুল দ্রাবিড় এবং জুবিন ভারুচা তাকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং অবশেষে তিনি ১.১০ কোটি টাকায় আরআর দলে বিক্রি হন।
কিন্তু সমস্যা তখন হয়েছিল যখন আইপিএল শুরুর আগে ক্যাম্পে অনুশীলনের জন্য যেত, সেখানে সে একা কিশোর ছিল এবং বাকি সবাই বড় খেলোয়াড়, তাই তাকে কীভাবে অনুশীলন করানো হবে তা নিয়ে চিন্তা ছিল। তবে কোচ রাহুল দ্রাবিড় এবং জুবিন ভারুচা তার সমাধানও বের করেছিলেন। একটি সূত্রে প্রকাশিত হয়েছে যে - “আপনি প্রস্তুতিতে কোনও পার্থক্য তৈরি করতে চান না। এটা নিশ্চিত করার জন্য যে প্রত্যেকে অনুভব করে তাদের সমানভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে, তাই সে জানে যে তাকে বাকি সকলের মানের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। কিছু ছোট পরিবর্তন যেমন, আমরা ওকে উচ্চ গতিতে (সাইডআর্মস যা ১৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার বেশি গতি তৈরি করতে পারে) খেলাতে শুরু করেছি যাতে সে কিছু দ্রুত বোলারের সাথে অভ্যস্ত হতে পারে যাদের সাথে সে আইপিএলে খেলতে পারে,” সূত্রটি যোগ করেছে।
ওঝা পিটিআইকে একথা বলেন ওর বাবা সঞ্জীব যখন ওর আট বছর বয়স তখন ওকে আমার কাছে এনেছিলেন।" প্রতিটি শিশুই আলাদা হয়, কিন্তু সেই বয়স থেকে, যদি আমি ওর বয়সী অন্য ছেলেদের দিকে তাকাই, তবে দেখব ওকে যা শেখানো হত, তা কার্যকর করার বুদ্ধি ওর ছিল। ওর স্ট্যান্স, ব্যাক-লিফট, এক্সিকিউশন, ইনটেন্ট, এই চারটি স্তম্ভ সবসময় একই তালে থাকত,”।
ওঝা টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে আরও বলেন, “আপনারা ওর শটের মধ্যে শক্তি দেখেছেন, আমি দেখেছি শরীরের অবস্থান, ব্যাটের ঝোঁক এবং নিখুঁত টাইমিং। যদি ছক্কা মারার একমাত্র মাপকাঠি শক্তিই হত, তাহলে কুস্তিগীররাই ক্রিকেট খেলত। এটা পাঁচ বছরের প্রশিক্ষণ, প্রতিদিন ৬০০টা করে বল খেলা। অন্য ছেলেরা অ্যাকাডেমিতে হয়তো দিনে ৫০টা বল খেলত। আমি ইউটিউবে বৈভবের প্রশিক্ষণের প্রায় ৪০টা ভিডিও আপলোড করেছি। আপনারা দেখবেন ওর ব্যাটের ঝোঁক যুবরাজ সিংয়ের মতো।”